জোড়া ইলিশ
আমরা যারা পূর্ব বঙ্গ থেকে পশ্চিম বঙ্গে স্থানান্তরিত হয়েছি তাদের প্রিয় খাদ্য হলো বর্ষাকালের ইলিশ মাছ। হ্যা ইলিশ মাছ হলো আমাদের এক রকম পরিচয় পত্র। ইলিশ মাছ রান্না করতে বিশেষ কিছু কৌশল লাগে না। একটু কালো জিরে আর কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে একটা পাতলা ঝোল ইলিশ মাছের করা যায় যেটা হলো কি এক রকমের প্রাথমিক ব্যঞ্জন।
অবশ্য সেইটাই যে এক মাত্র ইলিয়াসের ব্যঞ্জন সেটা বলা ভুল হবে। ইলিশ নিয়ে আসে নিজের সাথে অনেক অনেক ব্যঞ্জনের প্রকরণ আর সব গুলো বলা বোধহয় অসম্ভব। তবে বর্ষা কালে মধ্যমগ্রামের বাড়িতে আমরা জোড়া ইলিশের স্বাদ নিতে বিলক্ষণ যেতাম।
ঠাম্মা, মানে আমার ঠাকুমা, সব রকমের ইলিশ মাছের ব্যঞ্জন খুব সুস্বাদু বানাতো আর আমরা ছিলাম প্রধান ভক্ষক গণ।
১৯৮৪, আর তখন আমাদের পরিবারে দুই রকমের লোকেদের আগমন হয়েছিল। আমার বড়ো জেঠুর যমজ মেয়ে (রিয়া ওর রাকা) আর আমার ছোট ভাই (বুবু) । প্রসঙ্গটা আনন্দের আর উল্লাসের কেন না মুখার্জী পরিবার এখন আরো বিস্তারিত। ঠাকুরদাদা জোড়া ইলিশ নিয়ে আসলেন।
রবিবার দিন দুপুর বেলা আমাদের মধ্যমগ্রামের বাড়ির বারান্দায় কলাপাতা তে ইলিশের পাতুরি আর ইলিশের ঝোল দিয়ে ভাত করা হবে। বিশেষ গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে ভাত তার উপর পদ্মা নদীর ইলিশের ব্যঞ্জন। আমার ঠাকুরদা বাজার করতে উস্তাদ লোক ছিলেন তাই বেশ বড়ো বড়ো দুটো ইলিশ নিয়ে এসেছিলেন। একটা ইলিশের ওজন আড়াই কিলোর মতো হবে। ভক্ষক অনেক আর তাই এই ব্যবস্থা। যাদের আগমন কে ঘিরেই এই প্রীতিভোজের আয়োজন তারা এখনো দুধের শিশু আর তারা জানেই না কি তাদের স্বাগতের জন্য কত লোকেরা আজ তৃপ্ত হবে।
মধ্যমগ্রামের বাড়িতে একটা বিশাল বড়ো উনুন ছিল যেটা এই রকম ভোজের জন্য বানানো হয়েছিল। তবে সেই দিন ওই উনুন ব্যবহার করা হয়নি। আমরা যেহেতু গোটা ১০ এক ছিলাম তাই ছোট উনুনে রান্না হয়েছিল। পাতুরি করা হলো কাঠ কয়লার আঁচে আর উনুনে হলো কালো জিরে দিয়ে ঝোল।
কলাপাতার উপরে যখন এই পুরো খাদ্যটা ভোগ করা হলো তখন মনটা জুড়িয়ে গেলো।
আজ ২০১৭, আমাদের সেই প্রীতিভোজ এখন ইতিহাস। এমন এক ইতিহাস যেটা বোধহয় আমার মেয়ে বুঝতে পারবে না। ও তো ইলিশ কে স্মার্ট ফোনেই দেখেছে। আজ কাল বাচ্চারা তো আছে কিন্তু বালকিল্লতা নেই। শিশু আছে শৈশব নেই। আজ কাল আমরা চাই কি ছেলে মেয়েরা "Mature" হয়ে যাক। শত হলে এই প্রতিশতের লড়াই যে লড়তে হবে। কচিভাব থাকলে যে সে লড়াই ওরা হেরে যাবে। তার পরে যদি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারে ? যদি ওদের রেজাল্ট ভালো না হয়ে? যদি ওরা ভালো কলেজে ঢুকতে না পারে ? সেই ভয় আমরা আমাদের অনেক এমন প্রীতিভোজকে ত্যাজ্য করেছি আর করবো।
জানি না আমরা ভালো হওয়ার জন্য কষ্ট করছি না ভালো হয়ে কষ্ট পাচ্ছি।
আজ এই পর্যন্ত।
ইতি
কল্যাণ
No comments:
Post a Comment