নোশ পুকুর
অনেক দিন পরে আবার লেখার মন হলো। হ্যা জানি কি অনেক দিন হয়ে গেছে আমি নিজের অতীতের পাতা পাল্টাই নী। কিন্তু যখন বর্তমান কাউকে ঘূর্নী ঘোরায় তখন অতীতকে স্মরণ করা খুব কঠিন। কিন্তু আজ অবসরে কিছু খুনের জন্য মনে করলাম।
কালকে যখন আমি হাঁটতে যাই তখন নজর পড়ে একটা পুকুরের দিকে। এমন না কি পুকুরটা কখনো আগে দেখিনি কিন্তু কালকে ওই পুকুরটাতে দেখলাম দুটো ছেলেদের চান করতে সাঁতার কাটতে। মনে হলো এমন যেন আমার সাথে আগে হয়েছে। হয়েছে বৈকী। মনে পড়ে গেল নশ পুকুর। হ্যা নস-পুকুর, আমার জীবনের হাসি আর কখনো কান্না।
গরম কালের ছুটিতে আমরা আমাদের দাদুর বাড়ি যেতাম। দাদুর বাড়ি বরিষা। বরিষা তখন প্রায় গ্রাম। কলকাতার প্রদূষণ আর মনোমদ তখন বরিশাকে স্পর্শ করেনি। নারকেল গাছ, পুকুর, জমিদার বাড়ি, কাচা রাস্তা আর পুকুরপারে আড্ডা। গরমকাল পরতেই কেমন জানি একটা মন হত কখন যাব দাদুর বাড়ি আর নশ পুকুরে সাঁতার কাটব।
নশ পুকুর ছিল আমাদের আকর্ষণ, আমাদের গরমকালের পারিশ্রমিক। নশপুকেরের ঠান্ডা জল গ্রীষ্মকালের গরমকে পুরো পুরী স্তব্ধ করে দিত। আসে পাশে সুপুরী আরে নারকেল গাছ গ্রীষ্মকালের পশ্চিমী বায়ুতে দুলত আর পুকুরের জলে তরঙ্গ এনে দিত। আমরা সেই জলে সাঁতার কাটতাম। আমি আর আমার ছোট ভাই। সেই দুপুর বার্তায় পুকুরে নেবে আমরা দুপুর দুটো অব্দি পুকুরের জলে পড়ে থাকতাম। আমরা তখন বরদাতে থাকি। ঐখানে পুকুর ছিলনা তাই আমাদের এই পাগলামি নশপুকুর দেখে।
নশ্পুকুর ছিল আমাদের বাড়ির গায়ে লেগে তাই খালি স্নানের সময় না অন্য সময় আমরা নশ্পুকুরের পাশে খেলতাম। কলকাতা ছেড়ে আমরা তখন গুজরাতে থাকি তাই ওই গরমকালের ছুটিতেই বরিষা তে এসে সব আল্ল্হাদ পুরো করতাম। ঝাল মুড়ি আলুর চপ পরশে মাছ আর নশ্পুকুর।
নশ্পুকুর আমাদের অনেক সুখ দুখের সাক্ষী। আমার মাসির বিয়ে, আমার দাদুর অবসান, আমাদের ঠাকুরের ভাসান। সব নশ্পুকুর দেখেছে। আমাদের সাথে হেসেছে আর কেঁদেছে।
২০১২ তে আমার দীদার অবসান হয়ে আর তার সাথে আমি নশ্পুকুরকে শেষ দেখি। আমাদের ফাঁকা বাড়ির মত সেও যেন কেমন মনমরা হয়ে আছে। জল যেটা আগে আয়নার মত স্বচ্ছ ছিল যেটা আজ হয়ে গেছে ঘোলা। আজ দায়িত্বহীন লোকেরা এই পুকুরে ময়লা ফেলে, জল নোংরা করে আর সেই তিরস্কার নশ্পুকুর চুপ চাপ সয়ে যায়ে আর কোনো বয়স্ক লোকের মত সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ে। যেই পুকুরে ঠাকুর ভাসান হয়ে সেই পুকুরেই আবার কেউ সিগারেট ফেলে আর কেউ চিপসের প্যাকেট। আজ নশ্পুকুরে খুব কম লোকেরা স্নান করে। আজ নশ্পুকুর অনাথ। কিন্তু সেইটা কেন হয়েছে আমরা জানি।
সুনেছি নাকি নশ্পুকুর ভরাট হয়ে যাবে। উন্নয়নের মাপদণ্ড। ভালই হলো। যারা নশ্পুকুরের কদর করত তারা তো আর নেই। নশ্পুকুর তাদের শ্রাধ্যের পিন্ডদান নিয়ে ভারী হয়ে গেছে। বোধ হয় তারাও নশ্পুকুরকে চাইছে তাই হয়েত।
আজ আমি আমাদের এই পুরো প্রজন্মের তরফ থেকে আমার পূর্বপুরুষের কাছে ক্ষমা চাইছি কি আমরা ওদের এই ঐতিঝ্য়ের রক্ষা করতে পারিনি।
No comments:
Post a Comment