Saturday, November 4, 2017

From the pages of the past (Part X) [ Romance with Cricket and Bubble Gum]

বাবল গম , ক্রিকেট  আর তার সাথে আমাদের রোমান্স 





ছোটবেলা যখন ছিল আমরা কেউ সমৃদ্ধ ছিলাম না।  বাড়িতে সাদা কালো টিভি সকাল ৬টা থেকে সকাল ১১টা  অবধি জল আর সন্ধ্যে ৪টে  থেকে ৮টা  অবধি জল।  পাড়া পড়শী আর তাদের কথা বার্তা শুনে বোড়োদের দিন কেটে যেত।  আমাদের বাড়ির পাশে ছিল একটা মাঠ আর পুকুর।  এর উল্লেখ আমি আমার প্রথম লেখা তে করে ছিলাম।  তা যাই হোক।  আমরা সেই মাঠে খেলতাম।  

১৯৮৪ এনেছিল একটা তুমুল ঝড় যেটাকে আমরা বলি ক্রিকেট।  কে জানতো ভবিষ্যতে এই ক্রিকেট কোনোদিন আমাদের দেশের নুতন ইতিহাস লিখবে ! ১৯৮৩ তে আমরা যখন বিশ্বকাপ জিতি তার পরে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই নুতন খেলার মন মাতানো পাগলামি।  ঘরে ঘরে বল অরে ব্যাট।  প্রতিটি ঘরে ছোট ছোট ছেলে, কেউ হতে চাই গাভাস্কার বা কেউ কপিল দেব।  

ফুটবল প্রিয় বাঙালি কিন্তু এর থেকে অছুত থাকে নি।  আমরা সবাই কিন্তু অনেক অনেক দিন ধরে এই খেলা তাকে ফলো করছিলাম কিন্তু ভালো ভাবে অনুসরণ করিনি।  বাঙালি বলে ফুটবল আর সেটাই ছিল আমাদের প্রধান পরিচয়।  বাঙালি যদি সন্ধ্যের আড্ডাতে ফুটবল নিয়ে আর রাজনীতি নিয়ে চর্চা না করে তালে সেই আড্ডা অসম্পূর্ণ আর লোকেদের রাতের খাওয়া হজম হয়ে না।  তবে ১৯৮৩ বিজয়ের পরে সেই চিন্তা ধারা বদলায়।  চায়ের দোকানের আড্ডায় একটা নুতন চর্চা, একটা নুতন খেলা নিয়ে, ক্রিকেট।  

ক্রিকেট খেলা হিসেবেই না কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে অনেক আকর্ষিত করেছিল লোকেদের।  বড়লোকদের খেলা এখন মধ্য-বিত্ত পরিবারের বসার ঘরে চলে এসেছিলো।  লোকেরা জানতে পারলো যে এই খেলা খেলার জন্য বড়োলোক হওয়া কোনো আজ্ঞাধীন শর্ত না।  লোকেরা এই খেলাটা নিজের মতো করেও খেলতে পারে, মাঠে, পুকুরের ধারে, ফাঁকা রাস্তায় আর এর মধ্যে নিজের হিসেবে অনেক পরিবর্তন পর্যন্ত করতে পারে।  

বাণিজ্যিক দিকে অনেক পণ্যদ্রব্য বাজারে ফেলা হলো।  এর মূল আধার ছিল ছোট ছেলেদের আকর্ষিত করা।  কেন না  বয়স্ক প্রজন্মকে ফুটবল থেকে সরানো খুব কঠিন আর ওদের বিচারধারা বদলানো একটা চ্যালেঞ্জ।  ছোট ছেলেদের মাথায় এইটা ভালো ভাবে লেখার জন্য ব্যবসায়ীরা নির্ভর করে বাবল গামের ওপর।  ৩০ পয়সা দামের এই দ্রব্য তার মধ্যে ওরা ঢুকিয়ে দিলো স্টিকার যেটা যত জমা করবে ওরা ওতো prize পাবে।  প্রতিটা স্টিকারে ছিল রান নাতো উইকেট।  রান জমা করতে হবে ১০০০ আর উইকেট জমা করতে হবে ৮ এই করলে prize পাবে।  

আমি আর তাপসদা এর মধ্যে অনেক ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম।  বাবল গম  একটা যেমন নেশা হয়ে গেছিলো।  খাওয়ার জন্য না কিন্তু ওই স্টিকার গুলো জমা করার জন্য। আমি রোজ আমার মা কিংবা বাবাকে আবদার করতাম একটা বাবল গম কেনার জন্য আর ওই স্টিকার গুলো জমা করে রেখে দিতাম।  অঙ্ক কোষে দেখে রাখতাম কি কত রান বানানো হলো।  রবিবার হতো আমাদের হিসেবে নিকেশ অরে বন্ধুদের মধ্যে হতো এক রকমের আরেকটা ব্যবসা।  কারুর রান বেশি থাকলে আর উইকেট না থাকলে সে দশ রান দিয়ে একটা উইকেট অন্যদের থেকে কিনে নিতো।  যার রান কম সে এক উইকেট দিয়ে দশ রান কিংবা কোনো কোনো দিন ২০ রান পর্যন্ত কিনতে পারতো।  এই ছিল আমাদের দুর্দান্ত হিসেবে নিকসের কথা।  এক রকম রোমান্সে যাতে ছিল ক্রিকেট, বাবল গম আর আমরা।  

আজকাল যখন বাচ্চাদের দেখি যারা ভিডিও গেম নিয়ে মত্ত আর তারা ক্রিকেট খেলছে ভিডিও গেম নিয়ে তখন আপসোস হয়ে কি এরা কি ওই আনন্দ পাচ্ছে যেটা আমরা পেয়েছিলাম।  বোধ হয় না।  আমাদের অর্থাবাব ছিল কিন্তু আমরা নিজেদের সুখ শান্তি নিজেরা খুঁজে নিতাম।  

আজকাল কিন্তু সে সব হয়ে না।  আর তাই এই লেখা যাতে আজকের প্রজন্ম শুধু বাবার - লোধির ইতিহাস পড়েনা।  যদি ইতিহাস পড়তেই হয়ে তালে যাতে পড়ে ওদের বাবা, মা, কাকা , কাকিমার ইতিহাস।  


ইতি 

কল্যাণ 

No comments:

Post a Comment