Saturday, November 4, 2017

From the pages of the past (Part - XI) [Morning of Madhyamgram]

মধ্যমগ্রামের সকাল 




অনেক দিন এমন হয়ে কি আমি অনেক দেরি অভদি ঘুমিয়ে থাকি।  সকাল হয়ে যায় কিন্তু আমার ঘুম ভাঙে না।  কেমন যেন একটা ক্লান্তি থেকেই যায় আমার শরীরে আর সে ক্লান্তি যে আদোও শারীরিক কি না সেটা কোনো রকম ভাবে বোঝা যায় না।  এতো আরামদায়ক বিছানা থাকতেও কেন যে ঘুম পুরো হয়ে না সেটা আজ অবধি জানতে পারি নি।  ঘুম যখন সকাল বলে ভাঙে না আর যখন অলসের বাঁধ ভেঙে যায় আর মনে হয়ে আরও একটু ঘুমিয়ে নি যেন কি কাল আবার ঘুম আসবে না তখন বুঝতে হয় কি সমস্যা শারীরিক না মানসিক।  

কিন্তু এক সময় এমন ছিল কি দশটা বাজলেই ঘুম এসে যেত আর ছটা বাজলেই ঘুম ভেঙে যেত।  এমন ঠিকানা , যেখানে বেশি ঘুম না তবে ভালো ঘুম হতো।  আমাদের মধ্যমগ্রামের বাড়িতে।  গরমকাল হোক বা শীতকাল ঠিক ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যেত তার বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।  

পাখির ডাক আর তার সাথে হালকা ঠান্ডা হাওয়া যেটা জানলা দিয়ে চুপি সাড়ে ঘরে ঢুকতো আর ঢোকা মাত্র আলতো আলতো করে মাথার উপর হাত বলাতো এই বলে কি "সকাল হয়ে গেছে অনেক ঘুম হলো এবার উঠে পর। " 

হওয়ার সাথে মিশে থাকতো উনুনের ধুয়ার গন্ধ।  সকাল বেলা উনুনে আঁচ দেয়া হচ্ছে অরে একটা অপ্ৰদূষিক ধুয়া আর মিষ্টি গন্ধ নাকে যেত।  পাশের বাড়িতে কোনো দিদি সকাল বেলা তানপুরা নিয়ে ভৈরবী রাগ সাধছে আর তার মিষ্টি সুর তার সাথে এই ধুয়ার গন্ধ মিলে একটা মন মাতানো আমেজের সৃষ্টি।  সেই আমেজ আরও উপভোগ করতো তারা যারা সেই সময় বারান্দায় দাড়িয়ে বা আরামকেদারায় বসে চা খেত।  সকাল বেলা এই গান, গন্ধ, চা আর আনন্দবাজার পত্রিকা নিয়ে শুরু হতো দিন।  

আমাদের বাড়ির নিচ দিয়ে একটা গেছো রোজ যেত খেজুরের রস নিয়ে।  অনেক সময় আমরাও ওই খেজুরের রস খেয়েছি।  সকাল সকাল খেতে খুব ভালো লাগে।  তখন কোনো FM রেডিও ছিল না তখন এইটাই ছিল আমাদের মর্নিং ব্লকবাস্টার আর এমন ব্লকবাস্টার যে নিত্য নুতন কাহিনী রোজ নিয়ে আসতো।  কখনো কখনো এই কাহিনীর মধ্যে কিছু অ্যাকশন হতো যেমন কি কাজের মাসির তক্কা-তক্কী আর কখনো সামনের টিউব-ওয়েল তে জল নিয়ে লড়াই।  

সব সকাল গুলোই একটা নুতন সকাল আর কোনো ভাবেই একঘেয়ে ছিল না।  

আজ কাল সে সব নেই।  সকাল বেলা হতেই এক রকমের নিত্যকর্ম একঘেয়ে জীবন।  বেশি ঘুম কিন্তু ভালো ঘুম না বা ভালো ঘুম ভাঙাও না।  
উঠে পড়তে না পড়তেই ফেসবুক দেখা কি কে আমাকে ভালোবাসে অরে কে আমাকে অগ্রাহ্য করে।  তার পর একটু টিভি দেখা আর সমাচারের নামে পরনিন্দা পরচর্চা।  
সকালে উঠে সমাচার পত্রে এই উদ্ঘোষণা পাওয়া কি এই পৃথিবীটা আর থাকার যোগ্য না।  চারি দিকে ত্রাহিমম আর ভ্রান্তির সৃষ্টি।  সবাই যেন দিশাহীন দৌড়োচ্ছে।  কখনো কখনো আঁতেল মার্কা কোনো 
esoteric বা দুর্বুদ্ধ ছবি বা লোকেদের থেকে রোগ হওয়ার ১০টি সহজ উপায় সোনা।  

সকাল এখন নির্মল না এখন সকাল হলো যুদ্ধের বুগেল।  

তাই এখনো মনে পরে মধ্যমগ্রামের সকাল। 


ইতি 

কল্যাণ 

No comments:

Post a Comment