Monday, November 5, 2018

The Story of Three Chairs (Bengali)

প্রায় পাঁচ বছর আগেকার কথা 


আমি তখন ইসরাইল গেছিলাম। ইহুদি লোকেরা খুব অকপট হয়ে ইটা আমি আগে থেকেই জানতাম।  ২০০৫ থেকে ওদের সাথে কাজ করে করে অনেকটা ওদের সংকৃতি আর ব্যবহার গুলো রপ্ত করে নিয়েছিলাম।  তবে কোনো কোনে আমার মধ্যে মদ্ধবিত্ত ভারতীয় বাসা করে বসেছিল।  তার ওপর পরিবারের দেওয়া সংস্কার মন আর আত্মার মধ্যে কেমন সার্কাস খেলা করছিলো।  একটা মিটিং এ ডেকেছিল আর আমি আর আমার কয়েকটা সহকর্মীরা আগে পৌঁছে যাই.। মিটিং এর যে ঘর ছিল ওখানে কয়েকটা চেয়ার খালি ছিল।  তবে আমরা সবাই আসার প্রতীক্ষা করতে থাকি।  সবাই আসে আর নিজের নিজের জায়গায় বসে যায়।  এমন ও ঘটে কি আমাদের অনেকের সঠিক জায়গায় স্থান না পেয়ে পেছনে বসে থাকি।  

মিটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমার এক ইহুদি বন্ধু আমাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে "তোমরা তো অনেক আগে এসেছিলে তালে পেছনে বসলে কেন "
আমি বললাম "না আমরা  ...... আসলে সবার জন্য প্রতীক্ষা করছিলাম তার বড় বসতাম"

আমার এই কথা শুনে ও হাসলো।  বুঝতে পারলাম না। তার পর হাসির ছলে বললো 
"My friend Listen to a Story"

গল্পটা যা আমি তা বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি 

এই গল্পটা হলো একটা খালি ঘর আর তিন খানা চেয়ার নিয়ে।  তবে এই চেয়ার কোনো যা তা চেয়ার নয় কিন্তু।  এর মধ্যে একটা হলো রাজার চেয়ার, একটা মন্ত্রীর আর একটা প্রজার।  ঘরটা খালি।  কেউ নেই।  

এর মধ্যে একজন সজ্জন পুরুষ ঘরে ঢুকে আসে। পরনে ভালো কাপড়, শিক্ষিত, দেখতে ভালো, মানে গোটা গোটা জেন্টলম্যান বলে মনে হয়ে। সে বসার জায়গা খুজ্জিল। দেখলো তিনটে চেয়ার।  ভাবলো রাজা আর মন্ত্রী তো আমি নোই তাই প্রজার চেয়ারটাতে ভালো করে বসে যাই।  বসে গেলো।  

এর পর একটা হেক্কাই চেহারার লোক, মুখে পান গোজা, বিডি খেতে খেতে ঘরে ঢোকে।  সেও জায়গা খুজ্জিল।  তবে দেখে কি দুটো জায়গা খালি।  মন্ত্রীর আর রাজার।  সে রাজার ছিঁড়ে বসতে তবুও একটু দ্বিধা পায় তাই মন্ত্রীর চেয়ার এ বসে যায়।  

এর পর আসে আরেক লোক, মদ খেয়ে চুর , পরনে ময়লা পোশাক, চান করে নি প্রায় এক সপ্তাহ হবে, গাঁজা টানতে টানতে ঘরে ঢোকে।  ঘরে ঢুকে দেখে , আরিব্বাস রাজার চেয়ার তো খালি।  কিছু না ভেবে সে রাজার চেয়ার এ বসে যায়।  

তার পর আমার বন্ধু আমায় জিজ্ঞেস করলে, "কি বুঝলে ? "
আমি ওর কথা আর গল্প দুটোই বুঝে গেছিলাম।  

অনেক সময় আমরা ভাগ্য কে দোষ দি আর জিজ্ঞেস করি, " আমরা কেন রাজা হতে পারিনি আর অপোগন্ড কয়েকটা লোকেরা কেন আমাদের উপর রাজত্ব করছে ?"

তার উত্তর হলো , আমাদের এই লজ্জা , এই ভয় যেটা সংস্কারের সিরিঞ্জে ঢুকিয়ে আমাদের এক একটা শিরায় উদ্বুদ্ধ করা হয়ে।  আমাদের ছোটবেলা থেকে সেখান হয় ভয় পেতে, সংযত থাকতে, বলতে পারেন আমাদের সংকৃতি নামে একটা কাপুরুষ বানানোর পাঠশালা তৈরি করে দেওয়া হয়ে।  সেই জন্য আমরা অনেক জায়গায় নিজেদের প্রকাশ করেও, নিজেদের গুন্ বুঝেও, রাজার চেয়ার এ  বসতে পারিনা।  কেন বসতে পারি না ? আমাদের সংস্কার, লজ্জা ইত্যাদী আমাদের আটকে দেয়।  আর দরজা খুলে দেয় যত সব উল্লুকদের জন্য যাদের ওই স্থানে বসার কোনো যোগ্যতা বা অধিকার নেই।  

তাই  

১. আপনার ভাবি প্রজন্ম কে নির্ভয় বানাবেন। পরীক্ষায় ভালো নম্বর না পেলেও চলে, সবচে বড়ো পরীক্ষা তো জীবন নেয় আর সে নেয় প্রতিদিন।  তালে নির্ভয় না হলে যে জীবনের পরীক্ষায় কখনো কেউ উত্তির্ণ হতে পারবে না।  

২. সন্মান করতে সেখান ভয় করতে না।  গুরুজনেরা সন্মান চায়, আর যে গুরুজন ভয় দেখতে ভালোবাসে সে তো গুরুজন নয়।  প্রকৃত গুরুজন সময়ের সাথে তাল দিয়ে চলে।  "না" শব্দটা খুব কম বলে।  বলে, চেষ্টা করো, যদি না পারো আমি তো আছি।  এই হলো গুরুজনের পরিচয়।  

৩. আপনি যদি গুরুজনের শ্রেণী তে আসেন তাহলে মনে রাখবেন সবচে ভালো প্রণাম হলো যখন আপনার ছোটজনেরা নাম করে।  আর সেই নাম করার জন্য "না" শব্দ অত্যন্ত একটা বড়ো আগড়।  "হ্যা" বলতে শিখুন।  নেতৃত্ব করুন মনিবি না।  

এইটা যদি সেখান তাহলেই দেখবেন সব রাজার চেয়ার এ সজ্জন আর ভালো লোক বসে আছে।  

ইতি 
কল্যাণ মুখার্জী 

No comments:

Post a Comment