সোনার টুকরো ছেলে
আমরা জারা আজকের এই যুগে নিজেদের প্রগতি ও নিজেদের জীবনকে আরামদায়ক বানানোর জন্য নিজেদের এই প্রতিযোগিতামূলক জগতে ঝেঁকে দি তাঁরা এই টুকু যদি বুঝতে পারে কি প্রতিযোগিতা খালি রেসের ময়দানে ভালো আর জীবনে ভালো না তালে কিন্তু অনেক ভালো হয়ে। আমি এই বলছিনা কি নিজেকে বিস্তারিত ও আরও উন্নত করার জন্য মানুষের চেষ্ঠা করতে নেই । তবে নিজেকে উন্নত করা আর অপরের থেকে বেশি বড় হয়ে দাড়ানো দুটো ভিন্ন ব্যাপার ।
নিজেকে উন্নত করে হয়ে সন্তুষ্ঠী আর বেফিজূল স্পর্ধা করে ধকল বাড়ে। কিন্তু এই মিহিন পার্থক্যটা অনেকেই এড়িয়ে যায়ে । শৈশব থেকে শুরু হয়ে ঈদূর দৌড় আর এই দৌড় চলে জীবনের শেষ পর্যন্ত । আমি যে আমি আর আমি যে অপরের থেকে ভালো এই দুই বুলির মধ্যে দ্বিতীয় বুলিটাই বোধয় লোকেদের ভালো লাগে ।
দ্বিতীয় বুলি যদি সফল করতে হয়ে তালে দরকার পড়ে একটা উচ্চতার চিহ্ন, আর তাকে অনুসরণ করে তার থেকে ভালো হবার স্পর্ধা । কিন্তু কাউকে অনুসরণ করে কি ওর থেকে ভালো হয়ে ওঠা যায়ে? ব্যাপারটা ভাবার মতন । তবে শৈশবের কচি বয়েসে সেটা ভাবা জায়েনা আর লোকেরা ভাবতেও দেয় না ।
সৌরজ্যতী সব সময় ফার্স্ট হত । প্রথম শ্রেনীর ছাত্র । যাকে বলে বর্ণপরিচয়ের গোপাল । সব মায়েরাই চিত এমন একটা ছেলে বা মেয়ে । পাঠশালা যাওয়ার আগে সব মায়ের কাছেই অর ছেলে বিধান রায়, সুভাষ বোস বা রবীন্দ্রনাথ হয়ে কিন্তু পাঠশালার প্রতিযোগিতামূলক বাতাবরণ যখন তৈরী হয়ে তখন চোখের সামনের থেকে পর্দা সরে যায়ে আর বোঝা যায়ে কে কত জলে ।
আমাদের ও আমাদের সবার মায়েদের কেন্দ্র বিন্দু সৌরজ্যতী । Apple থেকে আরম্ভ করে zebra অবদি সব বানান মুখস্থ । অঙ্কে সব গণনা সঠিক । হাতের লেখা যেন মুক্ত ।
"নিশ্চয় ছেলেটা বড় হয়ে ডাক্তার হবে ।" মাদের নিত্য আলোচনার বস্তু সৌরজ্যতী। ওই কচি বয়েসে ও নিজেই জানত না কি ও কত বড় যশস্বী ব্যক্তি ।
আমরা সবাই ছিলাম প্রতিযোগী । সৌরজ্যতী আমাদের উচ্চতার মাপ দন্ড । তবে আমি বুঝলাম সৌরজ্যতীর থেকে ভালো হতে গেলে সৌরজ্যতী কে অনুসরণ করা ব্যাপারটা কিন্ত খুব একটা ভালো প্রস্তাব না । তাই আমি আমার কির্তীযজ্ঞ কারবার খুঁজে বের করছিলাম । আমি সৌরজ্যতীর মতন নম্বর অর্জন করতে পারব না আর আমার নাম স্কুলের বোর্ডে লেখা হবে না । আমার খাতা টিচাররা অন্যদের দেখাবে না আর আমি ১০০/১০০ পাব না । আমার উত্তর্বহিনী লাল কালিতে সুসজ্য়ীত হবে সেটা অবধারিত । তাই চাপ নিয়ে লাভ নেই ।
সৌরজ্যতীর মত যদি কেন্দ্র বিন্দু হতে হয়ে তালে এমন একটা গুন খুঁজতে হবে যেটা খালি আমি পারি ।
মোড়ের মাথায় সুসভনের তেলেভাজার দোকান । আলুর চপ, বেগুনি খুব ভালো বানাত । আমার প্রিয় খাবার আর আমার কীর্তির প্রথম পায়্দান ।
ঘরে যাওয়ার সময় আমি আর আমার মা ছিলাম সাথে ছিল সৌরজ্যতী আর সৌরজ্যতীর মা । আমি হঠাথ বলে উঠলাম "মা আলুর চপ খাব"।
মা কিছু বললনা আবার আপত্তিও করলো না । খালি বলল "বাড়ি গিয়ে ভাত খেতে হবে কিন্তু"।
আমি বললাম " আচ্ছা খাব "।
"সৌরজ্যতী আলুর চপ খাবি, আমি কিন্তু খেতে পারি অনেক, তর থেকে বেসি ।"
"হ্যা খাব, আর আমিও বেসি খেতে পারি ।"
মনে মনে ভাবলাম, খেলাটা ভুল চয়ন করা হয়েনী তো, এ যদি আলুর চপেও উত্তীর্ণ হয়ে ।
তবে সেইটে হলো না ৫ বনাম ২ ছিল স্কোর আর আমি বিজয়ী । মনের মধ্যে একটা অন্যরকম সন্তুস্থী হলো । ঠিক যেমন ফুটবল ম্যাচ জিতে হয়ে ।
তবে সেইদিন পেট খারাব গিয়ে আর বেদম পিটানি, কেননা যথারীতি ভাত খেতে পারিনি ।
সেদিন বুঝলাম, সব মানুষ অন্যরকম। অন্য কে হারাতে গিয়ে, নিজেকে হারিয়ে বসতে হয়ে, সেইটা বুঝলাম ।
কিন্তু সময়ের চাকিতে সেই চিন্তাধারা যেন আজ কোথায় পিসে গেছে কে জানে । আজ আমিও এই দৌড়ের ভীড়ের ভেতর এক জন ।
No comments:
Post a Comment